জ্বী হ্যাঁ। ডিজিটাল যুগের কল্যাণে কম্পিউটার যন্ত্রের ‘সফটওয়্যার’ আর স্মার্টফোনের ‘অ্যাপস’ এখন চাহিবা মাত্র হাতের মুঠোয় পাওয়া যায়। এজন্যে টাকা–পয়সা, খরচপত্র তেমন একটা লাগে না। স্মার্টফোনের ‘প্লেস্টোর’ থেকে ডাউনলোড করে নিলেই হলো। একেবারে নাগালের মধ্যেই এসে উপস্থিত হচ্ছে নানান ডিজিটাল ইঞ্জিন। অথচ কী ভয়ংকর! এসব অ্যাপস ধ্বসিয়ে দিতে পারে কারও ব্যক্তিগত জীবন। তাছাড়া নতুন বা দৃষ্টিনন্দন স্মার্টফোনের জন্য পুরনো ফোনসেট বিক্রি করা অনেকের কাছে নেশার মতো। এই বিক্রি অনেকটা নিজের ব্যক্তিগত ডায়রিটা হস্তান্তরের মতো। আপনি কি তা খেয়াল করেছেন? কারণ স্বাভাবিকভাবেই স্মার্টফোনে ব্যবহারকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তথ্য সংরক্ষণ করে রাখেন। স্মার্টফোন বিক্রির কথাটা মাথায় এলেই সবাই যে কথাটা সবার আগে ভাবেন তা হলো, সব ডেটা মুছে ফেলা। এসব মুছে ফেলা কিন্তু অতো সোজা কাজ না। যা ভাবছেন তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন কাজ। প্লেস্টোরের ডাউনলোড করা মামুলি ‘অ্যাপস’ দিয়ে এসব মুছে ফেলা তথ্য পুরোটাই উদ্ধার করা এখন পান্তা ভাত।
নিয়তির পরিহাস! স্মার্টফোন বিক্রির সঙ্গে এসব তথ্য যে পাচার হয়ে যায় সে খবর কেউ আর রাখে না।
স্মার্টফোন এখন সস্তা। স্মার্টফোন চলতি বাজারে এখন অতি সস্তায় মেলে। তাই দেখা যায়, পুরনো স্মার্টফোন বদলানো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। গড়ে প্রতি আঠার মাসে ব্যবহারকারী তার স্মার্টফোন বদলায়। উন্নত মডেলের, আপডেট ভার্সনের আরেকটা নতুন স্মার্টফোন কেনে। এরপর পুরনোটা অব্যবহৃত বস্তুর মতো ছুঁড়ে ফেলে দেয়। অথবা কাউকে দান করে দেয়। আবার নানান কারণে হারিয়েও ফেলে কেউ কেউ। একবারও কি ভেবে দেখেছেন? যে ফোনটা হাতছাড়া করেছেন, সেই ফোনে রয়ে গেছে বন্ধু, আত্মীয়–স্বজনের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ নাম্বার। এসব নাম্বারের কারণে প্রতারিত হতে পারেন যে কেউ। দেখা গেছে, এসব ফোনে তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা ফ্লাশ মেমোরি চিপের মধ্যে। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় পকেট কম্পিউটার, ডিজিটাল ক্যামেরা তথা সঙ্গীতের অডিও ভিডিও’র যাবতীয় ন্যানো যন্ত্রপাতিতে। আর ফ্লাশ মেমোরির কথা কে না জানে। রাস্তাঘাটে ফুটপাতের হকারের কাছেও আজকাল ফ্লাশ মেমোরি পানির দরে পাওয়া যায। দামে সস্তা হলেও সব ফ্লাশ মেমোরিই টেকসই হয়।
স্মার্টফোনের চিপ, মাদারবোর্ড, মেমরি কার্ড নস্ট হয়েছে? আপনার এমন ধারণা হলেও, মনে রাখা দরকার, স্মার্টফোনের স্থায়ী তথ্য মুছে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা অত্যন্ত মন্থর। স্মার্টফোন প্রস্তুকারকরা অবশ্য নিরাপদে তথ্য মুছে ফেলার নির্দেশনা স্মার্টফোনের প্যাকেটের সঙ্গে সরবরাহকৃত কাগজপত্রে উল্লেখ করে থাকে। কিন্তু প্রায়শই দেখা যায়, এ নির্দেশনা অনুসরণ করা জটিল হওয়ায় কেউ আর এসব ঝামেলার পথ মাড়ায় না। অন্যদিকে দেখা গেছে, চীন, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ইত্যাদি দেশের জনপ্রিয় স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো এসব নির্দেশনার সেবা দিতে তাদের ওয়েবসাইট, অ্যাপস ইত্যাদির কথা বলে। কিন্তু ক্রেতার পক্ষে তা খুঁজে বের করা কষ্টকর। সেখানে বলা থাকে, আপনার এই স্মার্টফোনটা একেবারে তথ্যমুক্ত করতে চাইলে ফোনের পেছনের একটা বাটনে চাপ রাখা অবস্থায় একই সঙ্গে আরো তিনটা বাটনে চাপ দিতে হবে ইত্যাদি। তার মানে কী! কাজটা করতে হবে একই সঙ্গে দু’জন মানুষকে। তাই ট্রাস্ট ডিজিটালের প্রধান টেকনিক্যাল অফিসার নর্ম লডারমিলস পুরনো স্মার্টফোন বিক্রির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। এগুলো হ্যাকার বা চোরের হাতে পড়লে কী অবস্থা দাঁড়াতে পারে কল্পনা করা যায়?
পুরনো স্মার্টফোন বিক্রির ব্যাপারটা নিয়ে তবুও কেউ কেউ হয়তো বলবেন: ‘ধুত্তরি! স্মার্টফোনের সব ডেটা মুছে ফেলবো। তারপর বিক্রি করবো।’ কিন্তু না। এমন ভাবার কোন কারণ নেই। আপনার ব্যক্তিগত রেকর্ড বা অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা অতো সহজ নয়। তাই সাধু সাবধান! আপনার বিরুদ্ধে বড় সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আপনার স্মার্টফোনটা সদা প্রস্তুত।
অনুবাদ
© শেখ আনোয়ার মূল লেখক