আজকাল অনেককেই দেখি সংসার নামক জায়গাটাকে জেলখানা মনে করে, নিজেকে খাঁচায় বন্দী মনে করে। ভেবে দেখুন তো এই সংসারটা না থাকলে আপনি কোথায় পেতেন এমন বাবা মা আর ভাইবোন? কোথায় পেতেন সারাদিনের পরিশ্রমের পর শান্তিমত একটা ঘুমানোর জায়গা?
অনেকেরই জীবনে অনেক কিছু হবার স্বপ্ন থাকে, কিন্তু সংসারের কারণে কিংবা আর্থিক বা পারিপার্শিক অবস্থার কারণে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়না। এই ভেবে অনেককেই দেখি হৃদয়ভাঙার গল্প লেখে, অথবা স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় তাদের আফসোসের শেষ নেই।
স্বপ্ন গুলো আমরা আসলে কেন দেখি , শুধুইকি নিজেদের জন্য? যে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে সেকি শুধু শিক্ষক হওয়ার সম্মান পাবে এইটুকু আশা করেই স্বপ্ন দেখে নাকি তার হাত ধরে অনেক গুলো মানুষ আলোর দেখা পাবে সেই আশায় স্বপ্ন দেখে? আমরা আসলে স্বপ্ন যাই দেখি তা কেবল আমাদের একার জন্যে না, অনেকগুলো মানুষকে ঘিরে এবং তাদের উপকার করার একটা আশা থেকেই আমাদের তৈরি হয় স্বপ্ন গুলো।
এখন সংসারে এসে যদি সেই স্বপ্নটা পূরণ করতে না পারি আর সেইটা ভেবে যদি নিজে নিজে কষ্ট পেতে থাকি তাহলেতো আর সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়ে যাবে না। কি দরকার শুধু শুধু মনোকষ্টে থাকার? তারচেয়ে বর্তমানে যা পেয়েছি ,যতটুকু পেয়েছি তাই নিয়ে যদি আল্লাহ্’র কাছে শুকরীয়া আদায় করি সেইটাইকি সবচেয়ে উত্তম না? অবশ্যই উত্তম এবং শুকরীয়া আদায়ের ফলে ইনশা আল্লাহ্ অবশ্যই আপনার জীবনের নেয়ামত আল্লাহ্ তায়ালা বাড়িয়ে দিবেন।
প্লিজ কখনো নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়নি ভেবে নিজের মনকে কষ্ট দিবেন না। কারণ আপনি নিজে নিজের জন্য যে স্বপ্ন দেখছেন সেইটা আপনার জন্য উত্তম ছিলোনা বলেই আল্লাহ্ আপনাকে সেইটা দেননি, ঠিক যেমন মা ছোটবেলায় খুব বেশি কটকটি কিংবা লজেন্স খেতে এলাও করতোনা অথচ আমরা ভাবতাম এত মজার খাবার কেন মা খেতে দেয়না? কারণ মা’তো জানতো কোনটা আমার জন্য উত্তম আর কোনটা না।
যাদের শিক্ষক কিংবা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন গুলো পূরণ হয়নি, তারা বর্তমানে যে অবস্থাতে আছেন সেখান থেকেই চেষ্টা করুন অন্যের উপকার হবে এমন কিছু করার। স্বপ্ন যখন প্রবল হয় তখন সবকিছুর মেইনটেইন করেও সেই স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব, না পারলেও অন্য কোনভাবে হলেও আপনি সেই স্বাদ নিতে পারেন, কারণ আপনার স্বপ্নতো অন্যদের ঘিরেই ছিলো।
আর সংসার নামক স্বর্গে এসে যে মানুষ গুলোকে আপনি পেয়েছেন, স্বামী-স্ত্রী, শ্বশুর শাশুরী, দেবর ননদ বা বাচ্চা কাচ্চা হিসেবে, তাদেরকে ভালোবাসুন হৃদয় দিয়ে। অফিসের বসকে ভালো কাজ দেখিয়ে যে প্রশংসাটুকু পেয়ে আপনি আহ্লাদিত হতে পারতেন এবং সেই আহ্লাদিত হতে না পারার কারণে আপনার যে আফসোস বা মনোকষ্ট হচ্ছে তারচেয়ে বহুগুনে বেশি শান্তি পাবেন সংসার নামক জায়াগায় এসে সংসারের ঐ মানুষ গুলোকে ভালোবাসে এবং তাদের থেকে ভালোবাসা পেয়ে। আপনি নিজের শ্রম আর মেধা দিয়ে একটা অফিসকে উন্নত করার চিন্তা করছেন অবশ্যই সেইটা ভালো চিন্তা, কিন্তু আপনার নিজের সংসারের মানুষ গুলোতো আপনার নিজেরই, তাদেরকে খুশি করার জন্যেওকি আপনার শ্রম আর মেধা ব্যয় করা উচিত না? এইটাওতো আপনার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
আর মনে রাখবেন যে ব্যক্তি তার সংসারের ব্যপারে দায়িত্বশীল না , সে কোনদিন কাজের ব্যপারেও দায়িত্বশীল হবেনা।
©FA
