প্রবাসে সাংবাদিকতার নেপথ্যে কি?
মোশারফ হোসেন নির্জন, অস্ট্রেলিয়া থেকে
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পরবাসে নিজেকে খাপ খাওয়ানো, ক্যারিয়ার গোছানো এত সব দু;সাধ্য কাজ, তার ওপরে সাংবাদিকতা! হয়তো বোঝার উপর শাকের আঁটি ! না ব্যাপারটা মোটেও তেমন না।
প্রবাসে সাংবাদিকতা এক চ্যলঞ্জের নাম । যার নেপথ্যের ত্যাগ ও সহনশীলতার গল্প অনেকেরই অজানা । আসুন জেনে নেই প্রবাসে সাংবাদিকতার ইতিকতা।
নব্বই দশকে প্রবাস থেকে চিঠি’র সাথে আবেগ পাঠাতেন মায়ের আদরের খোকারা। তখন প্রবাসে বাংলাদেশীদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্র তেমন ছিল না বললেই চলে, যদিও বিলেত সহ বিশ্বের কয়েকটি শহরে বাঙ্গালির নিজস্ব অর্থায়নে সৃষ্ট প্রেসের ইতিহাস আছে।
এবার বাংলাদেশের প্রসঙ্গে আসি, তখন দেশে স্রেফ প্রিন্টমিডিয়ার দাপট। বিটিভি ছাড়া তেমন প্রাইভেট চ্যানেলও শুরু হয়নি। প্রবাসীদের দু একটা ডকুমেন্টারি কালে ভাদ্রে হয়তো দেখানো হতো। কিন্তু একবিংশের শতাব্দির প্রথমদিকে প্রাইভেট টিভি চ্যানেল এলেও সেইভাবে গুরুত্ব পায়নি প্রবাসীদের হালহকিকতের খবর।যদিও প্রবাসে বাংলাদেশীদের পৃষ্ঠপোষকতায় সিডনি, লন্ডন, নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত আরো অনেক অধুনা শহরের বাংলা অধ্যুাষিত অঞ্চলগুলোতে কিছু বাংলা পত্রিকার বিকাশ দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃত সুযোগ তখনো সেই অর্থে শুরু হয়নি।
তবে এ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের গোড়ায় প্রবাসীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারও; ফলস্বরুপ দেখা যায় অনলাইন গণমাধ্যমের প্রসার । সেই থেকে প্রবাসীদের জন্য পৃথকভাবে অনলাইন পোর্টাল ও টিভিতে সংবাদের চাহিদা বাড়তে থাকে । সময়ের ধারাবাহিকতায় সকল মাধ্যমের মিডিয়াতে গুরুত্ব পেতে শুরু করে রেমিটেন্স আর সুনাম কুড়ানো প্রবসীদের গল্প। শুরু হয় প্রবাস থেকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে দেশকে লালন করার অভিনব সুযোগ । যারা দেশে টুকটুক কিংবা প্রফেশনালি সাংবাদিকতা করে প্রবাসী হয়েছেন তারা যেন তখন নতুন করে প্রাণ ফিরে পান ।
প্রবাসে নিজেকে সেবক হিসেবে গড়ে তোলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ রেমিটেন্সের সাথে বাড়তি যোগ করেছেন দেশে সংবাদ প্রেরণের কাজ । ফেলে আসা মাতৃভুমির কল্যাণে সংবাদ প্রেরণের এ চর্চা আজও বিদ্যমান। তাদের দেখানো পথ দেখে যারা গণমাধ্যমকে পছন্দ করে কিন্তু পূর্বে কাজ করেনি আজ তাদেরও একটা বড় অংশ স্বগৌরবে নাম লিখিয়েছে প্রবাসী কলম সৈনিক কিংবা টিভি সংবাদকর্মী হিসেবে।
এবার শিরোনামের কথায় ফিরে যাওয়া যাক। আসুন এবার নেপথ্যের গল্প জেনে নেই। দেখুন প্রবাসে সাংবাদিকতা একটি দূরুহ কাজ। কেবল মাত্র দেশপ্রেম থাকলেই এটি সম্ভব। কারণ শুধু সাংবাদিকতা করার জন্য নিশ্চয়ই কেউই প্রবাসে আসে না। প্রত্যেকেই একটি উপার্জন ক্ষমতার সদুপায় নিয়ে বিদেশগামী হয়। তারপর স্বীয় আয়ের পথ তরান্বিত করার পাশাপাশি সংবাদ কর্মী হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য নিবেদিত হয়।তবে এখানে সাংবাদিকের ভূমিকা হয়তো সব ক্ষেত্রে এক নাও হতে পারে। কমিউনিটর কাজে আস্থাশীল হয়ে উঠা কেবলই নির্ভর করে সাংবাদিকতার সু-বৈশিষ্ট্যের উপর ।তবে এইটুকু মানতে হবে সাংবাদিকতা প্রবাসে থেকে করা চাট্টিখানি কথা নয়। এটি কেবল মনের জোর, প্রবল ভালোবাসা ও ত্যাগের মানসিকতা লালনেরই ফল। সেই সাথে অচেনা মুল্লুককে জয় করার দুঃসাহস । আর স্বদেশীদের গুণকীর্তন করার প্রয়াস ও তাদের সুথ দুঃখ আনন্দ বেদনার চিত্র দেশবাসীর কাছে বস্তুনিষ্টভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা।
এ কাজটি সময়ানুসারে কঠিন থেকে কঠিনতর । দূরুত্ব, সময়, কর্ম সবকিছু ছাপিয়ে দেশ নিয়ে পড়ে থাকার এক অদম্য নেশাও বটে। তাছাড়া, প্রায় এক কোটি বিশ লাখেরও বেশী বাংলাদেশী যেমন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে, তেমনি তাদের সাথে প্রায় সব দেশেই জড়িয়ে আছে ত্যাগী সাংবাদিকদের নামও।
মূলত যারা নিজের অবসরকে ত্যাগ করে কিংবা ক্ষেত্রবিশেষ আয়ের উৎসের ক্ষতিসাধনের কথা উপেক্ষা করে ; নিজেকে এই মহান পেশায় নিযুক্ত রাখতে মরিয়া তাদের আর এক নাম প্রবাসী গণমাধ্যম কর্মী। তবে ভাষাগত দক্ষতা, সময়ানুপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও মানুষকে আপন করে নেওয়ার মোহনীয় শক্তি আর ‘হলুদে’ গা না ভাসানোর সামর্থ্য অর্জন করা ঢের চ্যলেঞ্জিং। অথচ এগুলোই অত্যাবশকীয়, আর যারা এগুলো অর্জন করতে পারে তারাই আদতে পায় গ্রহণযোগ্যতা।
মোদ্দাকথা, প্রবাসে হাজার প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সংবাদ বহন করার নেপথ্যে আছে শত আবেগ আর স্বতস্ফূর্ত ভালোবাসা ছড়ানোর মুগ্ধ গল্প । যা দ্বারা একজন প্রবাসী সাংবাদিক সকল প্রবাসীর বন্ধুুতে পারিণত হয় ও দুষ্টচক্রের অবসানে যোদ্ধা হতে নিজেকে ভিনদেশে উৎসর্গ করে।