ইন্টারনেটের ভাল দিক যেমন আছে, তেমনি আছে খারাপ দিক। বলা যায়, ইন্টারনেটে ভাল খারাপ সমানুপাতিক। ইন্টারনেটকে ভাল, না খারাপ ভাবে ব্যবহার করবেন সেটি নির্ভর করে আপনার উপর। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারলে, আপনার, আপনার পরিবার আপনার শিশুদের জীবন হয়ে উঠতে পারে দূর্বিসহ।
পৃথিবীর সব কিছুর পরিবর্তন ঘটে, হয় বিবর্তন। আজ থেকে ৫০ বছর আগের সম্পর্ক, পরিবেশ যেমন ছিল, এখন সেটা নেই। আবার আজ থেকে ৫০ বছর পরেও এখনকার অবস্থায় থাকবেনা।
প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে দৃষ্টিভঙ্গি, কালচার, অভিজ্ঞতা, ভালবাসা প্রকাশের ধরণেও পরিবর্তন ঘটে, ঘটবে। সামাজিক ডিজিটাল মাধ্যম আসার পরে, মানুষ এখন ঘরে বসেই তার জানবার চাহিদা পূরণ করতে পারে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই, সকল সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী প্রায় সকল মানুষই সামাজিক মাধ্যমে নিজের বা অপরের দৃষ্টিকোণ, লোক দেখানো, মূল্যবোধ যাচাই এর চেষ্টা করেন।
কিছু ভুল, সকল সমাজ, সকল মানুষের জন্যই ভুল। সেগুলো সব মানুষকেই বিব্রত করে। অনলাইনে ব্যক্তিগত কোন কিছু প্রকাশিত হলে, সেটি অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার একজন মানুষের জন্য যেমন বিব্রতকর তেমনি বিব্রতকর বাংলাদেশের একজন মানুষের জন্যও। একজন সেলিব্রিটির জন্য যেমন বিব্রতকর, তেমনি বিব্রতকর সাধারণ মানুষের জন্য। তাই জেনে, বুঝে, সজ্ঞাণে কাউকে বিব্রত করা আইনগত দিক থেকে অপরাধ হলেও একজন সভ্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে খুবই জঘন্য একটি কাজ, নীচু কাজ। কারো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি, কিংবা কাউকে ছোট করা কিংবা কিছু ভাইরাল করা মানেই আপনি কাজ কর্মহীন একজন মানুষ, বিবেক বুদ্ধিহীন একজন মানুষ।
দিন শেষে প্রতিটি মানুষই মানুষ। সকলেরই একটি মন আছে। যেহেতু প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা হয়েছে তাই মানুষ তার চাহিদা ইন্টারনেটে পূরণ করে। মানুষ ভিডিও কল করে, সেক্সটিং করে, ভালবাসা থেকেই ভালবাসার মানুষটির ব্যক্তিগত বিষয় ডিভাইসে সেভ রাখে। এই কাজ ভাল না খারাপ সেই তর্ক করা যায়, কিন্তু সত্য হলো প্রযুক্তির কারণে অনেকেই এই কাজ করে। কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা যায়, আপনি কী জীবনেও ভালবাসার মানুষটির সাথে অনলাইন ভালোবাসা এর চাহিদা প্রকাশ করেননি, তাহলে দেখা যাবে, ৮০ শতাংশর উপর মানুষই কোন না কোন সময় এগুলো করেছে। পার্থক্য হলো কারোটা প্রকাশ পেয়েছে, আর কারোটা পায়নি।
ধরুণ এখন প্রকাশ পেল, স্কাইপ বা ফেসবুকের যে ভিডিও চ্যাট হয় সেগুলো তারা সংরক্ষণ করে এবং সেগুলো কোন হ্যাকারের হাতে পড়েছে। আগামী অত তারিখে ৫ কোটি ভিডিও ছাড়া হবে। তাহলে কার কার যে মুখ শুকিয়ে যাবে সেটি তখনই বোঝা যাবে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে ব্যক্তিগত বিষয় প্রকাশিত হয় সেগুলোর অনেক সময়ই নিজেদের ইচ্ছায় হয়না। বরং তৃতীয় কোন পক্ষের কারণে হয়। আবার আপনি আপনার জায়গা থেকে যা সবাইকে শেয়ার করছেন বিশেষ করে আপনার বাচ্চাদের ছবি কিংবা কিছু মুহূর্তের ছবি ভাবছেন এটি আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার আমার ইচ্ছা আমি শেয়ার করেছি আপনার তাতে কি. আসলে আমার কিংবা অন্য কারো কিছু বলার নেই.
কিন্তু এটা মনে রাখবেন, মানুষ কখনও ভাল, কখনও খারাপ, কারো জন্য ভালো, কারো জন্য খারাপ। আর প্রতিদিনই কারো পক্ষেই ভাল হয়ে চলা সম্ভব না। তাই আপনার বিশ্বস্ত, ভালবাসার মানুষটিই আগামীকাল কোন কারণে হয়ে যেতে পারে খারাপ। এমনকি এই যে, আমি নীতি কথা বলছি, সেই আমিও ঘুম থেকে উঠে, আমার নীতি কথার বিপরীত মানুষও হয়ে উঠতে পারি।
তাই অবশ্যই অন্তর্জালিয় মাধ্যম এর খারাপ ব্যবহার থেকে দুরে থাকবেন। যদি করে থাকেনও তাহলে তাৎক্ষনিক নিজে ডিলিট করবেন, অন্যকেও ডিলিট করতে বলবেন। শুধু একজন ডিলিট করলেই হয়না, অন্য পক্ষর মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যেহেতু এগুলোর ক্ষেত্রে নারীদের আর শিশুদের বেশি সমস্যায় পড়তে হয় তাই তাদের নিরাপদ হওয়া সবচেয়ে জরুরী।
আর যারা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করে, তাদের আসলে বলার কিছু নেই। এর কোন সমাধানও নেই। একটাই সমাধান এদের বেকার না রেখে কাজে যুক্ত করতে হবে। স্বকার মানুষের এগুলো নিয়ে মজা করার সময় নেই।
তাই মজার ছলে আজ যেটি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন, সেটিই আপনার জীবনে হতে পারে ভয়াবহ কোন বিষয়। এগুলো বাদ দিয়ে, একটা বই নিয়ে পড়তে বসুন, অথবা একটা ভাল মুভি দেখুন। আড্ডা দিন, ধার্মিক হলে প্রার্থনা করুন. নিজে ভালো থাকুন সবসময় আর সবাই কে ভালো রাখার জন্য চেষ্টা করুন.