রিপোর্ট: মোশারফ হোসেন নির্জন।অস্ট্রেলিয়া।
এ যেন ক্ষুদার রাজ্যে অস্ট্রেলিয়া গদ্যময়।উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর ঘোর অন্ধকারে খোদ অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশকেও উপেক্ষা করছেন সদ্য গমনকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষার্থী, কেউ এসেছেন উন্নত চিকিৎসা নিতে আবার কেউবা এসেছেন স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণ ভিসায়।
কভিড নাইন্টিন এর ছোবলে সারা পৃথিবীর মতো থমকে গেছে অস্ট্রেলিয়াও। তৃতীয় মাত্রার লকডাউনে ঘুরছে না অর্থনীতির চাকা। চাকুরী হারিয়েছেন বেশীরভাগ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নাকাল অবস্থায় পড়েছেন সাম্প্রতিক কালে পড়তে আসা নতুন শিক্ষার্থীরা। অনেকে সঙ্গে করে আনা অর্থ ফুরিয়ে পড়েছেন অর্থনৈতিক সংকটে, আবার এ অনিশ্চিত সময়ে খুজে পাননি কাংখিত জবও। এমতাবস্থায় স্বদেশে ফিরতে আকুতি জানাচ্ছেন তাদের অনেকেই।
ভুক্তভুগী সিডনির এক বাংলাদেশী ছাত্র আরিফ জানান, ‘ছয় মাস ধরে সিডনিতে আছি, মাঝখানে একটা ক্যাজুয়াল জব করতাম। এখন সেটাও নেই। এখানে লাইফ স্টাইল অনেক ব্যয়বহুল। ওদিকে দেশে বাবারও ব্যবসা বন্ধ। কারো কাছে হাত পাতার ইচ্ছে নেই। সবমিলিয়ে দেশে ফিরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।
অন্যদিকে যারা স্বল্প সময়ের ভিসায় এসেছেন, তারাও ফিরতে চান। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় ভিসার মেয়াদ শেষের আগেই ফিরতে হয়, তবে করোনার কারণে অনুমতি নিয়ে কেউ চাইলে থাকতে পারবে । কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে অরক্ষিত-স্বজনদের উপর বোঝা বাড়াতে চান না কেউ-ই।
মাসসুর এম. শুভ নামে আরেক ভিজিটিং ভিসাধারী জানান ‘স্বস্ত্রীক অস্ট্রেলিয়া এসেছি কিছুদিনের জন্য। এখন দেশে যাওয়া আমার ভীষণ প্রয়োজন। কারণ আমি ব্যবসা রেখে এসেছি। এপর্যন্ত দুবার এয়ার টিকেট ক্রয় করেছি। যার দুটো ফ্লাইট-ই বাতিল হয়েছে। যেহেতু এই মুহুর্তে আর নতুন কোন ফ্লাইট নেই, আমার টিকেটরে অর্থও এক ধরণের আটকে আছে। সবমিলিয়ে নিজের খরচের বাজেটেও শেষ দিকে। দ্রুত দেশে না যেতে পারলে ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হবো। আমার মতো এমন অনেকে আছেন যাদের দেশে ফিরতে না পারলে ভীষণ ক্ষতি হবে। তবে হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, তারা আমাদের শীঘ্রই একটি সমাধান দিবে বলে আশ্বস্ত করেছে।সুনির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখনো পায়নি যদিও।
এ দিকে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্টদূত জনাব সুফিউর রহমান জানান, বাংলাদেশ সরকার এই মূহুর্তে মধ্যপাচ্যের প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তাদের সহায়তার পর অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ায় আটকে পড়া নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে আটকে পড়া আরেক শিক্ষার্থীর ভাষ্য মতে মোট একশো জনের বেশী লোক হলে বাংলাদেশে ফেরার জন্য বিমন ভাড়া করা সম্ভব হবে কর্তৃপক্ষের । আরো জানা যায় আটকে পড়া শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য ভিসাধারীরা মিলে ‘বাংলাদেশী স্টাক ইন অস্ট্রেলিয়া’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন। যার মাধ্যমে সবাই তথ্য আদান প্রদান করছেন। এই গ্রুপে বর্তমান সদস্য সংখ্যা তিনশো পনঞ্চাশেরও বেশী। এখন পর্যন্ত একশো তিরিশ জন পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়ে দেশে ফেরার জন্য মনোস্থির করেছেন। তবে শুরুতে এর সংখ্যা আরো বেশী খাকলেও কেউ কেউ সিদ্ধান্ত বদলে অস্ট্রেলিয়ায় থাকার ইচ্ছে পোষণ করেছে।
জানা যায়, শিক্ষার্থী যারা অর্থনৈতিক ভাবে অরক্ষিত কিন্ত গত পহেলা মার্চের আগে পূর্ণ একবছর অস্ট্রেলিয়ায় ছিলো এবং কাজ করেছে তারা তাদের সুপার ফান্ড ( যে ফান্ড থেকে রিটায়ারমেন্ট ছাড়া অর্থ উত্তোলন করা যায় না) থেকে সর্বোচ্চ দশ হাজার ডলার উঠাতে পারবে ।